শ্বেতকণিকাধিক্যঘটিত রক্তাল্পতা

ভারতের হায়দ্রাবাদে সেরা লিউকেমিয়ার চিকিৎসা

লিউকেমিয়া একটি শব্দ যা শরীরের রক্ত-গঠনকারী টিস্যুগুলির ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অস্থি মজ্জা এবং লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত। ক্যান্সার হল কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা শরীরের যে কোন জায়গায় পাওয়া যায়। লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে, অস্থি মজ্জায় অস্বাভাবিক কোষের এই দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। 

অস্থি মজ্জা হল হাড়ের কেন্দ্র গহ্বরে উপস্থিত নরম, স্পঞ্জি টিস্যু। রক্ত কণিকা অস্থি মজ্জাতে উত্পাদিত হয়। এই রক্তকণিকাগুলো আমাদের শরীরের সুস্থ ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে। লোহিত রক্তকণিকা শরীরের টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন এবং অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ বহন করে, যখন শ্বেত রক্তকণিকা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে প্লেটলেট রক্তের জমাট বাঁধা দূর করতে সাহায্য করে। 

লিউকেমিয়ার কিছু ফর্ম শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, আবার কিছু ফর্ম আছে যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও নির্ণয় করা হয়। লিউকেমিয়ায় সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকা জড়িত থাকে, যা সংক্রমণ বা বিদেশী দেহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজ করে। লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে, অস্থি মজ্জা অতিরিক্ত শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করে যা অস্বাভাবিক এবং অনুপযুক্তভাবে কাজ করে। 

লিউকেমিয়া কিভাবে বিকশিত হয়?

প্রতিটি রক্ত ​​কণিকার প্রাথমিক পর্যায় হল হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল। প্রাপ্তবয়স্ক রূপ নেওয়ার আগে এই স্টেম কোষগুলি একাধিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।

একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে, এই কোষগুলির প্রাপ্তবয়স্ক রূপটি হবে মাইলয়েড কোষ, যা লোহিত রক্তকণিকা, প্লেটলেট এবং শ্বেত রক্তকণিকার কিছু অংশে বিকাশ লাভ করে এবং লিম্ফয়েড কোষ যা নির্দিষ্ট ধরণের সাদা রক্তের আকার ধারণ করে। কোষ 

যাইহোক, লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এমন একটি অবস্থা থাকবে যেখানে রক্তের একটি কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। অস্বাভাবিক কোষ বা লিউকেমিয়া কোষের এই আক্রমণাত্মক বৃদ্ধি অস্থি মজ্জার ভিতরে তাদের স্থান নেয়। অস্বাভাবিক কোষের এই আকস্মিক বৃদ্ধি শরীরের কাজকর্মে অংশ নেয় না। যেহেতু তারা স্বাভাবিক কোষ দ্বারা দখলকৃত স্থান গ্রহণ করে, পরবর্তীটিকে রক্ত ​​​​প্রবাহে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় যাতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলির জন্য পথ প্রশস্ত হয়। এর ফলস্বরূপ, শরীরের অঙ্গগুলি অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে না এবং শ্বেত রক্তকণিকাগুলি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারাবে। 

বিভিন্ন ধরনের লিউকেমিয়া

এই রোগটি কত দ্রুত অগ্রসর হয় তার উপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ধরনের লিউকেমিয়া রয়েছে: 

• তীব্র লিউকেমিয়া

এটি অত্যন্ত আক্রমনাত্মক লিউকেমিয়া, যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলি বিভক্ত হয় এবং একটি উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সবচেয়ে সাধারণ পেডিয়াট্রিক ক্যান্সার।

• ক্রনিক লিউকেমিয়া

দীর্ঘস্থায়ী লিউকেমিয়া অপরিণত এবং পরিপক্ক কোষ উভয়ই থাকতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী লিউকেমিয়া তীব্র লিউকেমিয়ার তুলনায় কম আক্রমনাত্মক। এটি সময়ের সাথে আরও খারাপ হয়, এবং লক্ষণগুলি বহু বছর ধরে দৃশ্যমান নাও হতে পারে। শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্করা দীর্ঘস্থায়ী লিউকেমিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। 

কোষের ধরণের উপর ভিত্তি করে লিউকেমিয়ার প্রকারগুলি হল: 

• মায়লোজেনাস/মায়েলয়েড লিউকেমিয়া

এই ধরনের লিউকেমিয়া মাইলয়েড সেল লাইন থেকে উদ্ভূত হয়। 

• লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া

এগুলি লিম্ফয়েড কোষ লাইনে গঠন করে। 

লক্ষণগুলি

• জ্বর
• শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
• হাড়ের ব্যথা
• হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
• অবসাদ
• ফোলা লিম্ফ নোড
• বর্ধিত লিভার বা প্লীহা
• অত্যাধিক ঘামা
• ত্বকে লাল দাগ দেখা যায়
• সহজে রক্তপাত বা ক্ষত

লিউকেমিয়ার কারণ

তীব্র লিউকেমিয়ার সঠিক কারণ অনিশ্চিত রয়ে গেছে, তবে কিছু বিষয় কিছু ব্যক্তির জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

• উচ্চ মাত্রার বিকিরণের এক্সপোজার
• নির্দিষ্ট রাসায়নিকের এক্সপোজার, যেমন বেনজিন
• হিউম্যান টি-সেল লিউকেমিয়া ভাইরাস (HTLV) এর মতো ভাইরাসের সংক্রমণ।
• দীর্ঘস্থায়ী মাইলয়েড লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ ব্যক্তির একটি অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম থাকে যা ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম নামে পরিচিত। উপরন্তু, উচ্চতর বিকিরণ মাত্রার এক্সপোজার এই অবস্থার সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

লিউকেমিয়ার ঝুঁকির কারণ

• জেনেটিক ব্যাধি লিউকেমিয়ার বিকাশে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
• ভারী ধূমপান তীব্র মাইলোজেনাস লিউকেমিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
• পেট্রোল এবং রাসায়নিক শিল্পে পাওয়া বেনজিনের মতো কিছু রাসায়নিকের ভারী এক্সপোজার লিউকেমিয়া সংক্রামিত হওয়ার হুমকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। 
• লিউকেমিয়ার পারিবারিক ইতিহাসও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

যাইহোক, এটিও উল্লেখ্য যে অনেক ক্ষেত্রে এই কারণগুলির কোনটিই কার্যকর হতে পারে না। এই ধরনের মামলার কারণ অজানা থেকে যায়। 

লিউকেমিয়া রোগ নির্ণয়

• একটি শারীরিক পরীক্ষা করা হয় যেখানে চিকিত্সকরা লিউকেমিয়ার দৃশ্যমান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সন্ধান করেন। এই লক্ষণগুলির মধ্যে রক্তাল্পতা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া এবং লিভার এবং প্লীহা বৃদ্ধির কারণে ফ্যাকাশে হওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
• রোগ নির্ণয়ের আরেকটি পদ্ধতি হল রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা। এই রক্তের নমুনার একটি অধ্যয়ন ডাক্তারকে লাল বা সাদা রক্তকণিকা বা প্লেটলেটের অস্বাভাবিক মাত্রা সনাক্ত করতে সাহায্য করবে। রক্ত পরীক্ষাটি বিদ্যমান লিউকেমিয়া কোষের উপস্থিতি নির্ণয়েও সাহায্য করতে পারে। 
• সম্পাদিত আরেকটি পরীক্ষা হল অস্থি মজ্জা পরীক্ষা, যা হিপবোন থেকে সংগ্রহ করা হয়। এটি একটি দীর্ঘ, পাতলা সূঁচের সাহায্যে সরানো হয়, যা পরে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। 

যাইহোক, প্রতিটি লিউকেমিয়া টাইপ রক্তে সঞ্চালিত হয় না। তাদের অধিকাংশই অস্থি মজ্জা থেকে উদ্ভূত হয়। 

লিউকেমিয়ার চিকিৎসা

বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, লিউকেমিয়ার ধরন এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তার উপর নির্ভর করে, ডাক্তার এমন চিকিত্সার পরামর্শ দেবেন যা সবচেয়ে কার্যকর ফলাফল দেবে। এই চিকিত্সা অন্তর্ভুক্ত:

• কেমোথেরাপি হল লিউকেমিয়ার সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা। এই চিকিৎসা ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে। লিউকেমিয়ার ধরণের উপর নির্ভর করে, ডাক্তাররা একটি একক ওষুধ বা ওষুধের সংমিশ্রণ নির্ধারণ করতে পারেন। 
• ব্যবহৃত আরেকটি পদ্ধতি হল টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি। ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অস্বাভাবিকতার উপর ফোকাস করে ওষুধগুলি নির্ধারিত হয়। এই ওষুধগুলি এই ক্যান্সার কোষগুলির বৃদ্ধিকে মেরে ফেলার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়। রোগীর যে ধরনের লিউকেমিয়া নির্ণয় করা হয়েছে তার উপর এটি কাজ করবে কিনা তা পরীক্ষা করার পরেই এই চিকিত্সাটি নির্ধারিত হয়। 
• রেডিয়েশন থেরাপি হল লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত আরেকটি চিকিৎসা। উচ্চ-শক্তির এক্স-রে বা প্রোটনগুলি লিউকেমিয়া কোষের ক্ষতি করতে এবং তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। 
• আরেকটি কার্যকরী চিকিৎসা হল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্বাস্থ্যকর অস্থি মজ্জার বৃদ্ধির জন্য লিউকেমিয়া-মুক্ত স্টেম সেল দিয়ে অস্বাস্থ্যকর অস্থি মজ্জা অপসারণ করে সুস্থ স্টেম কোষ পুনরুদ্ধার করা হয়। 
• ইমিউনোথেরাপিও লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকরী বিকল্প। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ক্যান্সার কোষের সাথে লড়াই করার জন্য রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।